বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালিতে জনতার ঢল
আজ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিকালে সোয়া ৪টায় শুরু হওয়া র্যালিটি নাইটেঙ্গল মোড়, বিজয় নগর সড়ক, পল্টনের মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: দলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করেছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিকালে সোয়া ৪টায় শুরু হওয়া র্যালিটি নাইটেঙ্গল মোড়, বিজয় নগর সড়ক, পল্টনের মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। বড় আকৃতির জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকার পাশাপাশি রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেষ্টুন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান- বেগম খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের প্রতিকৃতিসহ নানা বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মীরা এই র্যালিতে অংশ নেয়। র্যালীতে ঘোড়ার গাড়ি ও হাতিও ছিলো।
র্যালির আগে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা এই র্যালির মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসী ও এই সরকারকে জানিয়ে দেবো যে, বিএনপি এখন সবচেয়ে বড় দল। এই দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব। এই দলকে শক্তিশালী করেছেন, বিকশিত করেছেন, জনগনের মধ্যে একে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি হচ্ছেন আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি এখনো এই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন এবং এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের মিথ্যা মামলায় অন্তরীন অবস্থায় আছেন, অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় আছেন।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিন নারায়নগঞ্জে পুলিশের হামলায় যুব দলের শাওন প্রধানকে হত্যার ঘটনাসহ প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে দলের নেতা-কর্মীদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা দেখেছেন, কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য কমানোর দাবিতে আমাদের আন্দোলনের কর্মসূচি করতে গিয়ে ভোলাতে আমাদের ছাত্র দলের নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছে। এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আজকে বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছে। আপনারা জানেন যে, তারা জনগনের অধিকার করেছে। আমাদের নেত্রী যিনি সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন তাকে গৃহ অন্তরীন করে রেখেছে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
তিনি বলেন, যখন মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে তখন তারা(সরকার) মনে করেছে চুরি করে, গুম করে, হত্যা করে, অত্যাচার-নির্যাতন করে এই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখবে। এই বিএনপির জন্মই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। বাকশাল থেকে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়েছে এ্ বিএনপিকে সামনে নিয়ে এসে স্বৈরাচারের সাথে লড়াই করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। আজকেও দেশের মানুষ এই সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে গণতন্ত্রের জন্য। আমরা সোচ্চার করে বলছি, গণতন্ত্রের জন্য এই আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্টকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্র সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা যদি দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চাই, আসুন আজকে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথ দখল করে দূর্বার আন্দোলন করে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে।
র্যালিতে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
কর্মসূচি:
নারায়নগঞ্জের শাওন প্রধান হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার বাদ জুম্মা সারাদেশে গায়েবানা জানাজা ও শনিবার সারাদেশে প্রতিবাদ সভার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা গ্রিনে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন ততকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। দলটি তার ৪৪ বছরে পাঁচ বার জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেছে। র্যালিতে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি হাতে ‘শুভ শুভ শুভদিন, বিএনপির জন্মদিন’, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয় কর্মী-সমর্থকরা। মহানগর বিএনপি, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, মতস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ছাত্র দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে ফকিরাপুল থেকে নাইটেঙ্গল রেস্তোরা পর্যন্ত গোটা সড়ক মিছিলে মিছিলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। র্যালির সম্মুখভাগ যখন নাইটেঙ্গল মোড়ে তখন মিছিলের শেষ ভাগ ছিলো ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত। র্যালি শুরুর আগে পুরো নয়া পল্টন সড়ক ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মহানগর দক্ষিনের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বক্তব্য রাখেন।
র্যালিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, মশিউর রহমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন, প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব মো: আব্দুর রহিম, তাঁতী দলের আহবায়ক আবুল কালাম আজদ, ইউট্যাবের অধ্যাপক ড. মো: মোর্শেদ হাসান খান, ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, মহাসচিব ডা. মো: আব্দুস সালাম, জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল কুদ্দুস, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রবিউল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
র্যালি উপলক্ষে নয়া পল্টনসহ শান্তিনগর পর্যন্ত ব্যাপক পুলিশ ও সাদা পোষাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে মোতায়েন করা হয়। শোভাযাত্রার অগ্রভাবে পুলিশ ও ডিবির সদস্যরা ছিলো। দুপুর থেকে নয়া পল্টনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। র্যালি শুরু হওয়ার পর এক ঘন্টা নয়া পল্টন, ফকিরাপুল, মালিবাগ, বেইলি রোড, কাকরাইল, বিজয় নগর সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।