বিক্ষোভ থেকে নতুন কর্মসূচি বিএনপি’র
আগামী ২৫শে জানুয়ারি দেশের সকল মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশ করবে বিএনপি।

প্রথম নিউজ, অনলাইন : সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের চতুর্থ ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আগামী ২৫শে জানুয়ারি দেশের সকল মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশ করবে বিএনপি। একই দিন বিএনপি’র সমমনা দলগুলোও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।
গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত যুগপৎ আন্দোলনে ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়ন এবং বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশ থেকে নতুন এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আগামী ২৫শে জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে’- দুর্নীতিবাজ, গণতন্ত্র হত্যাকারী, গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়া ও কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে দেশের সকল মহানগর ও জেলা সদরে সমাবেশ করবে বিএনপি।
মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার লুটপাট, দুর্নীতি করার জন্য বাংলাদেশের জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানিসহ সকল ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি করেছে। সরকার কোনো নিয়ম- কানুনের তোয়াক্কা না করে, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মতামত না নিয়ে, গণশুনানি না করে, প্রশাসনিক হুকুমের মাধ্যমে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। মাসে মাসে নাকি বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করবে। ভবিষ্যতে আরও দাম বৃদ্ধি করবে। বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করতে গিয়ে সারা দেশের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বিএনপি সরকারের আমলে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ মূল্য ছিল ইউনিট প্রতি ২ টাকা ৬০ পয়সা, আর এখন ১১ টাকার উপরে।
তিনি বলেন, সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ নামে বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই জনগণের পকেট কাটছে। আওয়ামী লীগের সিন্ডিকেট বিদ্যুৎ খাতে ডাকাতি করেছে।
অনেকে বিদেশে টাকা পাচার করে ধনীর খাতায় নাম লিখিয়েছে। আরেকজন ব্যাংক লুট করে সিঙ্গাপুরে শপিংমল, ফাইভস্টার হোটেলসহ বিভিন্ন সম্পদ গড়েছে। সরকার মেগা প্রজেক্ট করে, মেগা দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে যে, গত ১০ বছরে এদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ কোটি টাকারও বেশি পাচার করেছে। আন্ডার ইনভয়েস-ওভার ইনভয়েস করে এই টাকা আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা বিদেশে পাচার করেছে।
নয়াপল্টনে বিক্ষোভ ও সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একদিকে জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন। অন্যদিকে সরকার বিরোধী দলকে লাগামহীনভাবে দমনের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। এই সরকার অত্যাচারী, ফ্যাসিস্ট। সময় আর বেশিদিন নাই। রক্ষা পাবে না। ৭২-এর সংবিধানের কথা বলেন, কি কারণে বাকশাল করেছিলেন? বলতে কি পারবেন। প্রশাসন আর সরকার যৌথভাবে লুটপাট করছে। আমাদের সাফ কথা, মহান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে। অনেক শহীদ হয়েছেন যুদ্ধে। আমরা বেঁচে আছি এই দেশ দেখার জন্য। বোনাস পেয়েছিলাম ৬০ বছর, হয়তো আর কয়েকদিন বাঁচবো। না হয় বাঁচলাম না। মুক্তিযুদ্ধের মতো আবার যুদ্ধ করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য জীবন দিলাম।
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা অনেক সহ্য করেছি, আর বাঁচার উপায় নাই। এ সরকার টাকা পাচার করে মালয়েশিয়াসহ অন্য দেশে বাড়ি করেছে। আর বাংলাদেশের মানুষ কষ্ট করবেÑ তা হতে পারে না। এটা হতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, এই সরকার সব অগণতান্ত্রিক কাজ করেছে। বিএনপি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাকারী দল।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষের পকেট প্রতিমুহূর্তে কাটা হচ্ছে। এটা করছে ভোটচোর সরকার। তারা ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ৩০ হাজার কোটি টাকাতে নিয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত তারা জনগণের পকেট চুরি করে যাচ্ছে। এ টাকা তারা বিদেশে পাচার করছে। এই লুটপাট আগামী দিনে চলতে দেয়া হবে না। এখন সব লুণ্ঠনের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। কোনোভাবেই তারা রেহাই পাবে না। বাংলাদেশের মানুষ আজ আন্দোলনের মালিকানা হাতে তুলে নিয়েছে। এ সময় বক্তব্য রাখেন, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।
এদিকে, যুগপৎ আন্দোলনের তৃতীয় ধাপের কর্মসূচি দুপুর ২টায় শুরু হলেও আগেভাগেই নয়াপল্টনে আসেন দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিন বেলা ১১টা থেকে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে দলে দলে আসতে শুরু করেন তারা। নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে পল্টন এলাকায় জড়ো হয়ে সরকার বিরোধী সেøাগান দেন। অনেকে পল্টন এলাকা ঘিরে শো-ডাউন দেন। দুপুর ২টা নাগাদ নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। মিছিল-পূর্ব সমাবেশ শুরু হওয়ার পর নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিএনপি’র দলীয় অফিসের সড়কটিতে অবস্থান নেন হাজার হাজার নেতাকমী। এতে সড়কের একপাশে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশের পর বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে মিছিল শুরু করে দলটি। এরপর তা ফকিরাপুল মোড় ঘুরে ফের দলীয় কার্যালয়ে সামনে এসে শেষ হয়। বিএনপি’র সমাবেশ ও মিছিল ঘিরে পল্টন এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। নাইটিঙ্গেল মোড়, ফকিরাপুল মোড় ও দলীয় কার্যালয়ের আশেপাশে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়া পল্টন এলাকার আশপাশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: