মালয়েশিয়া সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে শক্ত হতে হবে

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : মালয়েশিয়ার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারকে কলঙ্কিত করা দুর্নীতিবাজ, লুটেরা সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয়। অন্যায্য ও অন্যায়ভাবে চার লাখ ৯৪ হাজার ১৮০ গরিব কর্মীর কাছ থেকে এই চক্রটি অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়। যার অন্তত সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকাই তারা ‘চাঁদার’ আড়ালে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে নিজেদের পকেটে পুরেছে। শ্রমবাজারের ‘বিষফোঁড়া’ রিক্রুটিং মাফিয়া এই চক্রটি এখন সুযোগ বুঝে আবারও দৃশ্যপটে।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি যখন খুলে দেওয়ার সময় হয়েছে, তখনই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের ‘ক্রিম’ খাওয়া রক্তচোষা এই সিন্ডিকেট গ্রামের অসহায়, অভাবী মানুষকে ‘রিঙ্গিতের’ লোভ দেখানো শুরু করেছে। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের চোখে ‘ধুলো’ দিয়ে আবারও মানুষের সহায়সম্বল বিক্রি করে নিঃস্ব করার মিশন নিয়ে সামনে এসেছে এই অতিমুনাফালোভী চক্রটি। বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের ভাবমূর্তি ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া লুটেরা এই রিক্রুটিং সিন্ডিকেটকে সমূলে নির্মূল করতে হবে। গ্রামের গরিব মানুষ যেন স্বল্প খরচে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারে এই উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, লোক যাওয়া কমে যাচ্ছে। সুতরাং আমাদের তো পাঠাতে হবে। সরকার দোনোমোনো করছে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠাবে কি না। সেই জায়গাটাকেই সুধীসমাজের পক্ষ থেকে আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলেছি, কোনো অবস্থাতেই এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো উচিত হবে না।
কারণ এই কর্মীগুলো সেখানে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন, কাজ পাচ্ছেন না ও রাস্তাঘাটে পড়ে থাকছেন। সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে তাঁরা এই অবস্থার মধ্যে পড়ছেন। এই অবস্থাটাই আমরা কোনো অবস্থাতেই আবার চালু করতে চাই না। যতই বলা হোক এবার তারা ভালো ব্যবহার করবে।
আজকে ৪০ থেকে ৫০ বছরে কেউ যদি ভালো ব্যবহার না করে থাকে, এখন হঠাৎ করে ভালো ব্যবহার করবে, সেটা হয় না।
এবার যদি আবারও ২৫, ৩০ ও ৫০ জন নিয়ে সিন্ডিকেট করা হয় তাহলে এই সিন্ডিকেট কী করে তা আমরা জানি। এই সিন্ডিকেশন তখন আবার সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে সাব-এজেন্ট করে তুলবে। ওদের সাব-এজেন্টের মাধ্যমে তারা কর্মী পাঠিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকার সঙ্গে আরো দেড় লাখ টাকা যোগ করে। এটা অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান নয়।
এই বাজার খোলার জন্য সহজ কোনো পথ নেই। ওইখানে যে হোম অফিস বলি, হিউম্যান রিসোর্চ অফিস বলি, প্রতিটি জায়গায় দুর্নীতি। এমনকি একেবারে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এই দুর্নীতি রয়েছে। কারণ এই যে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়, এটার ভাগ তারা সবাইকে দেয়। এখন তারাই বলে যে সিন্ডিকেট ছাড়া কর্মী পাঠাতে পারব না। অথচ বাকি ১৪টি দেশ কিন্তু সিন্ডিকেট ছাড়া কর্মী পাঠায়। সুতরাং আমাদেরও ১৪টি দেশের মতো কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিতে হবে। এ জন্য সরকারকে শক্ত হতে হবে।