লা মন্ডের সম্পাদকীয়: এই বিদ্রোহ মূলত কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে

প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও হয় সংবাদ বিশ্লেষণ কিংবা সম্পাদকীয় প্রকাশ পাচ্ছে।

লা মন্ডের সম্পাদকীয়: এই বিদ্রোহ মূলত কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: চলমান ছাত্র আন্দোলনের পটভূমিতে বিশ্বের নামকরা গণমাধ্যমগুলো সরব এবং সোচ্চার। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও হয় সংবাদ বিশ্লেষণ কিংবা সম্পাদকীয় প্রকাশ পাচ্ছে। এসব সম্পাদকীয় বা রিপোর্ট বাংলাদেশের জন্য মোটেই সুখকর নয়। সর্বশেষ বিখ্যাত ফরাসি দৈনিক লা মন্ডের সম্পাদকীয় পরিস্থিতিকে নাজুক বলেই  বর্ণনা করেছে, বলেছে এই পরিস্থিতি শেখ হাসিনার শাসনকে শুধু চ্যালেঞ্জের  মুখে ঠেলে দেয়নি বরং বলা চলে বাংলাদেশের ভিতকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

পরিস্থিতি এখনো উত্তপ্ত। ছাত্ররা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের দাবি, ছাত্র আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। কোটা সিস্টেমের বিরোধীতায় বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলোতে ছাত্র বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল। এই বিদ্রোহ দমাতে সরকার কড়া ব্যবস্থা নেয়। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ও বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাপের মুখে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সংরক্ষিত সরকারি চাকরির অনুপাতে ৩০% থেকে কমিয়ে ৫% করেছে।

১৯৭০ এর দশকের গোড়ার দিকে এই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, যা ভারত বিভক্তির পর থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামে পরিচিত ছিল। এই কোটাগুলো মূলত আওয়ামী লীগের সদস্যদের জন্য তৈরি করা হয়েছে,  প্রধানমন্ত্রী নিজে যে দলের সদস্য। তার  পিতা  শেখ মুজিবুর রহমান,  যিনি ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। এই বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদের  মনে আবেগ থাকলেও  তাদের  ক্ষোভ  মূলত ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, যিনি ১৫ বছর ধরে দেশ শাসন করছেন। ছাত্ররা  কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন চায়। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক বাংলাদেশির  চোখে শেখ হাসিনা  এখন কর্তৃত্ববাদী, স্বেচ্ছাচারী এবং রাজনৈতিক সহিংসতার  মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সংক্ষেপে দেশে এমন একটি সিস্টেম  চলছে  যা কেবল নামেই গণতন্ত্র। সেই দিন খুব বেশি দূরে নয় যখন একজন লৌহকঠিন নেত্রীর হাতে প্রতিষ্ঠিত শাসন ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রতিস্থাপিত করবে ।

কারণ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করেন । সমস্ত  চেক এবং ব্যালেন্স এককথায় উবে গেছে। সবচেয়ে বড় বিরোধী দল জানুয়ারিতে নির্বাচন বয়কট করে শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার একটি সহজ পথ করে দেয়। গত এক দশকে দেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও শেখ হাসিনা এখন তরুণদের মধ্যে হতাশার কেন্দ্রবিন্দু। যে তরুণরা  পড়াশোনা করতে সক্ষম তাদের জন্য চাকরির  সম্ভাবনা খুবই  কম। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৪০% । তারমধ্যে সরকারি চাকরিতে রয়েছে কোটার কাঁটা, যা মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সংরক্ষিত।

স্পষ্টতই সুপ্রিম কোর্ট কোটা সিস্টেমে যে ছাড় ঘোষণা করেছে তা ছাত্রদের ক্ষোভের অবসান ঘটাতে যথেষ্ট ছিল না। স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন, ইন্টারনেট পুনরুদ্ধার এবং পক্ষাঘাতগ্রস্ত শহরে কারফিউ আংশিক তুলে নেয়া সত্ত্বেও, ছাত্র নেতারা প্রতিকার চাইছেন । তারা শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছেন। এর আগে তিনি এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েননি। এটি প্রায় অসম্ভব যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ছাত্রদের দাবিতে সাড়া দেবেন। নিজের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতাকে উল্টে  রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘ ঐতিহ্যকে পাল্টে দিয়ে ১৭১ মিলিয়ন বাসিন্দার দেশে একটি প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা তার পক্ষে অসম্ভব। শেখ হাসিনা যিনি একজন দৃঢ়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিম তার এই হত্যাকাণ্ডের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। ভুলে গেলে চলবে না তিনি যেমন আচরণ করবেন ইসলামপন্থীরা তাই  তাকে ফেরত দিতে পারে।